২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি : পর্বসংখ্যা-৪২, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা

দ্বিতীয় অধ্যায় : ইবাদত
-

প্রিয় পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের ‘দ্বিতীয় অধ্যায় : ইবাদত’ থেকে আরো ২টি বর্ণনামূলক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্রশ্ন : সালাতের আরকান বলতে কী বুঝ? আরকানগুলো কী কী?
উত্তর : সালাতের ভেতরে যে ফরজ কাজগুলো, সেগুলোকে সালাতের আরকান বলে। আরকান মোট সাতটি। যথা-
১. তাকবিরে তাহরিমা : আল্লাহু আকবার বলে সালাত শুরু করা। ২. কেয়াম : দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। তবে দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে বা শুয়ে যেকোনো অবস্থায় সালাত আদায় করতে হয়।
৩. কেরাত : কুরআন মজিদের কিছু অংশ পাঠ করা।
৪. রুকু করা। ৫. সেজদা করা।
৬. শেষ বৈঠকে বসা : যে বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা হয়, তাকেই বলে শেষ বৈঠক।
৭. কোনো কাজের মাধ্যমে সালাত শেষ করা। সাধারণত সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা হয়।
প্রশ্ন : জাকাতের তাৎপর্য ও শিক্ষা বর্ণনা করো।
উত্তর : ‘জাকাত শব্দের অর্থ- পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। মুসলমানদের নিসাব পরিমাণ ধনসম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ বছরপূর্তিতে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত খাতগুলোতে ব্যয় করাকে জাকাত বলে।
গুরুত্ব ও তাৎপর্য : ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে সালাতের পরই জাকাতের গুরুত্ব বেশি। কুরআন মজিদের বহু স্থানে আল্লাহ তায়ালা সালাতের সাথে জাকাতের কথাই উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো এবং জাকাত দাও।’ (সূরা মুজাম্মিল-২০) জাকাত হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ধনীদের সম্পদে গরিবদের, নিঃস্বদের অধিকার। জাকাত দেয়া দরিদ্রের প্রতি ধনীদের কোনো অনুগ্রহ বা অনুকম্পা নয়; বরং তার সম্পদকে পবিত্র করার এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার একটি করণীয় ব্যবস্থা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (আল জারিয়াত : ১৯)
আমরা জেনেছি, জাকাত দিলে দাতার অন্তর কৃপণতার কলুষতা থেকে পবিত্র হয়। তার আমলনামা গুনাহ থেকে পবিত্র হয়। ধনীদের সম্পদে গরিবদের অধিকার আছে, একটি নির্দিষ্ট অংশ মিশে আছে। গরিবদের অংশ দিয়ে দিলে অবশিষ্ট সম্পদ মালিকের জন্য পবিত্র হয়ে যায়। জাকাত না দিলে তা ময়লাযুক্ত থাকে। জাকাত দিলে তা ময়লামুক্ত হয়ে যায়। জাকাতের আরেক অর্থ বৃদ্ধি। জাকাত দিলে জাকাতদাতার সাওয়াব বৃদ্ধি হয়। সামান্য জাকাতের বিনিময়ে পরকালে প্রচুর পুরস্কার লাভ করবেন। শুধু তাই নয়, দুনিয়াতেও আল্লাহ তায়ালা তার সম্পদে রহমত ও বরকত দান করবেন। তার অর্জিত সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা যে সুদের কারবার করে থাকো মানুষের সম্পদের সাথে মিলে সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার উদ্দেশ্যে, আল্লাহর কাছে তা মোটেই বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে জাকাত দিয়ে থাকো তাই কেবল বৃদ্ধি পায়- এরাই সম্পদশালী। (সূরা রুম : ৩৯) জাকাত দিলে ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়, ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। মহানবী সা: বলেছেন, জাকাত ইসলামের ধনী-গরিবের মধ্যে সেতুবন্ধন। (মুসলিম)
জাকাত দিলে ধনী-গরিবের ব্যবধান কমে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের খালিক ও মালিক। সব ধনসম্পদের মালিকও তিনি। ‘সম্পদের মালিকানা আল্লাহর’ এ কথার বাস্তব প্রমাণ ঘটে জাকাতে। সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ, তাই সম্পদ তাঁর বিধান অনুযায়ী গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। জাকাত না দিলে আল্লাহর মালিকানা অস্বীকার করা হয়। যারা সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখে, জাকাত দেয় না, তাদের পরকালে কঠিন আজাব ভোগ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement